দোষে গুনে মানুষ
জো সি আই এ র একটি কর্মসূচির প্রধান। কেট তার দুই মেয়ের মধ্যে বড়। একদিন টেলিভিশনে কেট তার মাকে একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিতে দেখে ফেলে। পরে জো বাড়ি ফিরলে কেট জানতে চায় কেন সে এত ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি বেছে নিয়েছে। জবাবে জো তার দাদার গল্প কেটকে শোনায়।
ছেলেবেলায় জোয়ের দাদা ক্যারিবিয়ান একটি দেশ থেকে গিয়ে আমেরিকায় ঘাঁটি গেড়েছিল। তার বয়স ১৭ বছর পূর্ণ হবার দিনটি ছিল ৭ ডিসেম্বের, ১৯৪১। পার্ল হারবারের দিন। এরপরে আমেরিকার ২য় বিশ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পরে এবং জোয়ের দাদা আর্মিতে যোগ দেয়। জোয়ের বাবা তাকে প্রশ্ন করেছিল কেন সে এমন একটি দেশের জন্য জীবন বাজী রাখছে যে দেশকে সে ভাল করে এখনও চেনে না। জবাবে জোয়ের দাদা বলেছিল, আমি মাত্র ইংরেজি বলা শিখেছি, নুতন করে জার্মান বা জাপানিজ ভাষা শিখতে চাই না। গল্পটা শেষ করে জো কেটকে তার প্রশ্নের জবাব দিল। বলল, আমার এই চাকরিটা করার কারণ, যাতে তোমাকে চাইনিজ অথবা রাশান শিখতে না হয়।
এতক্ষন টেইলর শেরিডানের টিভি সিরিজ লায়নেস থেকে একটি গল্প বলছিলাম। সেখানে জোয়ের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন জো সালদানা এবং শিশু অভিনেতা হানা হানিয়ার কেটের চরিত্রে।
আমেরিকানদের চরিত্র বোঝার চেষ্টায় আমি এই গল্পের অবতারনা করেছি। তারা যে কাজ করে তা বিশ্বাসও করে, উল্টা করে বললে, তারা যা বিশ্বাস করে সেটার জন্য তারা যা করা দরকার করে। আপনার বিশ্বাস ভাল কি মন্দ তা নয়, আপনি যদি আপনার পরিকল্পনার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন, সেটাই গ্রহণযোগ্য। এটাই মুক্ত মানুষের চরিত্র। বিশ্বাসের পরিনতি ভাল কি মন্দ সেটা আগে থেকে জানার কোন উপায় নেই।
আমাদের কাছে মুক্ত মানুষের চরিত্র বোধগম্য হওয়া একটু কঠিন। কারণ আমরা নিজেরাই একেকজন সৃষ্টিকর্তা। নিজেরাই সাপ হয়ে দংশন করি, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ি। আমরাই আইন তৈরি করি, আমরাই ভাঙি, এবং আমরাই আবার বিচার করি। দোষেগুনে সাধারন মানুষ হতে ভুলে যাই।
ট্রাম্প বরাবরই নিজেকে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করেন। নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ীদের বোঝেন। অনেকে মনে করেন ট্রাম্প প্রায়ই মিথ্যা বলেন। অনেকে মনে করেন তিনি যা বলেন সরাসরি ও স্পষ্ট। তার কথা অনেকের কাছে আক্রমণাত্মক বা অসম্মানজনক মনে হয়। আবার অনেকে বলেন ট্রাম্পের রাজনীতি প্রায়ই বিভাজন সৃষ্টি করে।
একটি স্মৃতিচারণ করে শেষ করবো। নভেম্বর, ২০১৬ সালের কথা। একসাথে হাঁটতে হাঁটতে হটাত থেমে আমার এক শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক আমাকে বললেন, 'এবার আমেরিকার নির্বাচনে কে জিতবে, বাবা?'
এই প্রশ্নের জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। তাছাড়া, তাঁর কোন প্রশ্নের জবাব আমি সাধারনত জানা থাকলেও দিতাম না। ওনার থেকে শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। কিন্তু সেদিন মুখ থেকে জবাব বেরিয়ে গেল। তারপর থেকেই বুকের মধ্যে ধড়াস ধড়াস করা শুরু হল। কি বললাম, কেন বললাম, কিভাবে বললাম!
তিনি কিছু বলেন নি। শুধু টের পেলাম জবাব শুনে তিনি আঁতকে উঠলেন। আজ তার আঁতকে ওঠার কারণ শুধু অনুমান করতে পারি। তবে আমি কেন সেই জবাব দিয়েছিলাম সেটা তখনি বার করেছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল, পশ্চিমাদের বর্বরতার ইতিহাস আছে এবং এতদিনে তারা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি পেয়েছে।
সহায়ক হিসেবে পড়তে পারেনঃ
১। https://www.theatlantic.com/magazine/archive/2016/06/the-mind-of-donald-trump/480771/
২। https://digitalcommons.csbsju.edu/psychology_pubs/129/
৩। https://www.pewresearch.org/politics/2024/09/09/harris-and-trumps-personal-traits-and-the-tone-of-their-campaigns/
Comments
Post a Comment