‘এনজিওগুলো সমস্যা তুলে ধরছে-সমাধান করছে, সরকারের কৃষিবিদরা কী করছেন?’

রাজশাহী সার্কিট হাউজে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায় এনজিও কর্মকর্তা ও কৃষি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ওই কর্মশালায় 'এনজিওগুলো যখন নানা সমস্যা তুলে ধরছে, সমাধান করছে, তখন সরকারের কৃষিবিদরা কী করছেন?' কৃষিমন্ত্রীর এমন প্রশ্নে বিতর্কের শুরু হয়।

আজ শুক্রবার বিকেলে বেসরকারি সংস্থা ডাসকো, বিশ্বব্যাংকের ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপ (২০৩০ ডব্লিউআরজি) এবং কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেড যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালার শুরুতে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ২০৩০ ডব্লিউআরজির এগ্রিকালচারাল ওয়াটারের পরামর্শক সৈয়দা সিতওয়াত শাহেদ।

উপস্থাপনায় তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং ইন্ট্রোডিউসিং ওয়াটার এফিসিয়েন্ট টেকনোলজিস (আইডব্লিউইটি) প্রকল্প থেকে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

এসময় পানি সংকটাপন্ন বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষ কমিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি।

সৈয়দা সিতওয়াত শাহেদ যুক্তি তুলে ধরেন, ধানের ক্ষেতে যেমন বেশি পানি প্রয়োজন হচ্ছে, তেমনি সেখান থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মিথেন নির্গত করছে। মিথেন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ত্বরান্বিত করছে।

তার উপস্থাপনা শেষ হওয়ার পর মন্ত্রী কর্মশালায় উপস্থিত কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান যে, তারা কী করছেন?

কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'এনজিওগুলো যখন এত সুন্দর উপস্থাপনা করতে পারছে, সেখানে আপনারা সরকারি কৃষি কর্মকর্তারা কী করছেন?'

তিনি আরও জানতে চান যে, 'সরকারি কৃষিবিদরা কেন এনজিওগুলোর মতো কাজ করতে পারে না এবং একইভাবে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারে না।'

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. ফজলুল হক সেসময় মন্ত্রীকে বলেন, 'বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের উৎপাদন কমানোর পরামর্শ দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হবে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ গত টানা চার বছর ধরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ হয়েছে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূমিকা রয়েছে।'

এ ছাড়া, ব্রি'র গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দেশের ধানক্ষেতগুলো পরিবেশ দূষণের চেয়ে পরিবেশ থেকে ৩৮ মিলিয়ন বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে।

সিনজেনটা ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট লিড মো. আব্দুর রউফ ব্রি কর্মকর্তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, 'মিথেন নিঃসরণ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হওয়ায় এ হিসাব ভুল হতে পারে।'

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, 'গভীর নলকূপে প্রি-পেইড মিটার চালু এবং বিকল্প ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং (এডব্লিউডি) প্রকল্প চালু করে পানির ব্যবহার ২ শতাংশ কমানো হয়েছে।'

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, তারা প্রথমবারের মতো চিহ্নিত করেছেন যে, ভূমি সমতল করা না হলে এডব্লিউডি প্রকল্পগুলো সফল হবে না।

তিনি আরও বলেন, 'বারি বেশ কিছু ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা এই অঞ্চলের কিছু কৃষক গ্রহণ করেছে।'

এসময় মন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ কর্মকর্তাদের বিতর্ক না করে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

কৃষির যথাযথ সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, 'আমার সরকার প্রতি ইঞ্চি চাষযোগ্য জমিতে কৃষির সম্প্রসারণ চায়।'

https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-582726

Comments

Popular posts from this blog

Smugglers-BDR Affair on Barendra Express

Hijbut holds meeting under police protection