রাবির ভর্তি পরীক্ষা: ভোগান্তিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ রেখে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একইসঙ্গে ভোগান্তিতে পড়েছেন তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরা। থাকার জায়গার সংকটে অনেকে রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্ম ও বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে শহরের চোদ্দপাই মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাস্তার পাশে ১২টিরও বেশি বাস দাঁড়িয়ে আছে। অধিকাংশ বাসে যাত্রীরা বসে আছেন। তাদের কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ বই হাতে পড়ছেন।
জানা গেল, তারা সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদযালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অভিভাবকের সঙ্গে এসেছেন। বাসগুলো চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
গত রাতে যারা কোনো জায়গা পাননি, তাদের অনেককে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা। ফুটপাতে কাপড় বিছিয়েও অনেকে রাত্রি যাপন করেছেন।
ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, হোটেল ও মেসগুলোতে অনেক টাকা দাবি করা হচ্ছে। ওই পরিমাণ অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য তাদের নেই। যে কারণে তারা কষ্ট হলেও ফুটপাতে-বাসে আশ্রয় নিয়ে আছেন।
আবু সাঈদ নামে একজন ছাত্র জানিয়েছেন, বগুড়ার শেরপুর উপজেলা থেকে ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী তাদের অভিভাবকের সঙ্গে একটি বাস রিজার্ভ করে রাজশাহীতে এসেছেন। তারা রাত আড়াইটার সময় রওনা দিয়ে ভোর ৫টায় পৌঁছেন। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত তারা বাসেই অবস্থান করেন। পরে তারা ফুটপাতে অবস্থান নেন, অনেকে বাসেই থেকে যান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চৌদ্দপাই এলাকায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের হাতে দেখা যায় পলিথিন ব্যাগের ভেতরে একটি বান, একটি কলা, একটি আপেল, একটি কমলা ও এক বোতল পানি। অনেকে মুখ ধুয়ে আধা লিটার পানির অর্ধেকটা রেখে দিচ্ছেন নাস্তা করে খাবেন বলে। অনেকে ফুটপাতে বসে পরীক্ষার শেষ প্রস্ততিতে ব্যস্ত।
বই হাতে দাঁড়িয়ে বোরকা পরা এক নারীকে দেখিয়ে আনিসুর রহমান বললেন, 'এই আমার মেয়ে। তার পরীক্ষা আছে মঙ্গলবার ও বুধবার ২ দিন।'
তিনি জানান, আজকের পরীক্ষা শেষ হলে তিনি মেয়েকে নিয়ে শহরের একটি হোটেলে উঠবেন।
আনিসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজকের দুপুর পর্যন্ত মেয়ের পরীক্ষা। ততক্ষণ ফুটপাতেই থাকব। পরীক্ষা হয়ে গেলে লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটা হোটেলে বুকিং দেওয়া আছে, সেখানে উঠবো।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, অন্য সময় হোটেলের যে রুমে তিনি ৩০০ টাকা ভাড়ায় থেকেছেন। সেই রুমেই তাকে এক রাতের জন্য ২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে।
আবু সাঈদ সরকার নামে আরেক অভিভাবক জানান, তার মেয়ের পরীক্ষা সকাল ৯টায়। কিন্তু তাকে বিকেলের শিফটের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ যে বাসটি তারা রিজার্ভ করে এনেছেন সেখানে ৩ শিফটেরই পরীক্ষার্থীই আছে। এই সময়টা তাদের ফুটপাতে কাটাতে হবে। সবার পরীক্ষা শেষ হলে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন। যেসব শিক্ষার্থীর আগামীকালও পরীক্ষা আছে, তারা নিজের দায়িত্বে বাড়ি ফিরবেন।
ক্যাম্পাসের চারপাশের সব রাস্তার চিত্রই ছিল একই রকম। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পাশেই ফুটপাতে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা বসে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কেন্দ্রীয় মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান নিয়েছেন।
যশোরের শার্শা থানা এলাকা থেকে এসেছেন মাইন রহমান। তিনি জানান, সোমবার রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেন তিনি। কিন্তু কোনো হোস্টেলে বা হোটেলে জায়গা পাননি।
স্টেশনেই একজন অপরিচিত ছাত্র তাকে মসজিদে থাকার পরামর্শ দেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে কিছু ছাত্র ও শিক্ষক রান্না করে ৩ বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন। সে জন্য তাদের রান্নার উপকরণ কিনে দিতে হচ্ছে।
Comments
Post a Comment