স্লোগানের কন্ঠ


 (প্রতীকী চিত্রটি এআই অংকিত, নিচের লিখা নয় 😁)



ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে স্লোগান। ক্লান্ত, কণ্ঠ খুঁজছে সে।
 
স্লোগানের পায়ের শব্দে ঘুম ভাঙে চেয়ারের। মধ্যরাত, না ভোররাত বোঝে না। নাপিতের দোকানের সিংহাসনী চেয়ার। নাপিত লাপাত্তা, ক’দিন দোকান খোলে না, চেয়ারের ঘুম সহসা ভাঙে না। এর মধ্যেই স্লোগানের আবির্ভাব।
 
‘ …কোথায় আমার সেই দরাজ কন্ঠ?’

চেয়ার বলে, 'কে যায়?'

স্লোগান উত্তর দেয়, 'বুঝেই তো ডাকছো, তাইনা?'

হুম, তোকে স্বরে চেনা যায়। কোথায় যাস?

যা বলার বলে ফেলো।
 
চেয়ার কটাক্ষ করে প্রশ্ন করে, 'খুব তো কদিন কণ্ঠে কণ্ঠে ফুটে বেড়াচ্ছিলি। এখন কি?'
স্লোগান অবাক হয়ে বলে, 'এখন কি মানে? এখনো কি আমার পায়ের শব্দে তোমার বুক দুরু দুরু করছে না!'

চেয়ারঃ কি অলক্ষুণে সব কথা বলিস! কাছে আয়! তোর মুখে কি শ্রুতিমধুর কিছু নেই?

স্লোগানঃ আমি তো সুরে বাঁধা। শ্রমে ঘামে ব্যাথায় বঞ্চনায় হৃদয় নিংড়ে বের হই। হাজার কন্ঠে সাজি। তোমার কানে এত ঠেকে কেনো?

চেয়ারঃ বইতে পারি নারে। ভারী লাগে, গলা চেপে আসে, পা কাঁপতে থাকে, প্রাণ বের হয়ে যাবে মনে হয়।

স্লোগানঃ চিকিৎসা কর।
 
চেয়ারঃ লাভ নেই। ওই ইন্টারনেট আছে না! ওটায় চেপে যে যখন বসে আর ওঠে না। দম বন্ধ হবার যোগাড় হয়।

স্লোগানঃ সমস্বরের সঙ্গীদের হারিয়ে আমিও ক্লান্ত। কণ্ঠ খুঁজছি। দরাজ একটা কণ্ঠ পেলেই সতেজ হবো। কিন্তু এখন তো তোমার ভালো থাকার কথা! নাপিত আসে না। দোকান খোলে না।
 
চেয়ারঃ হা। বেশ আছি। ভয় দূরে সরে যাচ্ছে ধীরে। গায়ে ধুলো মেখে রাতে তবু ঘুমোতে পারছি।

স্লোগানঃ আওয়াজ তো এখনো চলছে!

চেয়ারঃ ওই যে ইন্টারনেট, এখানে আসে না! ওতে ধ্বনি ছড়ায়। ম্যাচবাক্সের মত। একটা ফোঁস করলে সবকাঠি একসাথে ঝাঁ করে ওঠে। এখন যেমন তোর অস্তিত্ব আছে কি নেই, বুঝি না। থাকলেও কানে পৌঁছে না। চেঁচামেচি, ঘ্যানর ঘ্যানর, প্যানপ্যানানি নাই!

স্লোগানঃ এটা ভালো?

চেয়ারঃ ভালো নয়? বাপরে! কথায় কথায় কানে ধাপা ধরে গিয়েছিল। এটা নাই, ওটা নাই। এটা দাও, ওটা দাও। অসহ্য! ঘুমানোর সময়টা পর্যন্ত পাইনি!

স্লোগানঃ অবাক হচ্ছি না। বলে যাও।

চেয়ারঃ এখন কত শান্তি! ইন্টারনেট নেই। সোশ্যাল মিডিয়া নেই। এত সুরক্ষিত আগে কখনো থাকিনি।

স্লোগানঃ স্যোশাল মিডিয়ায় ভয় পেলে?

চেয়ারঃ ওরে বাপরে! সেকি মিডিয়া! সব ট্যাঁ টু আমাকে সেলাম করে, আর এটা নিজেকে মনে করে মেইনস্ট্রিম! যখন তখন লাইভ! কত কথা বলে! এত কথা কি? এখন সব বন্ধ। কত ভাল। চারিদিকে অন্ধকার। একমাত্র আমি পরিষ্কার। হে হে হে।

স্লোগানঃ ওদিকে অন্ধকারে মানুষের দম যে বন্ধ হয়ে এলো!

চেয়ারঃ মানুষ! কোথায় দেখো মানুষ? এরা দানব! শুধু চেয়ারে আগুন জ্বালে।

স্লোগানঃ তোমার নিজের মানুষেরা? তারাও দানব? তাদের কন্ঠেও আমি ঝংকারি।

চেয়ারঃ আমি ছাড়া সব অন্ধকার লাগে।

বাহিরে ঘোঁৎঘোঁৎ করতে করতে একটা ট্রাক চলে যায়। হেডলাইটের ঝলকানিতে চেয়ারের পাগুলো চকচকিয়ে ওঠে।

স্লোগানঃ ওকি! তোমার পেছনের দুই পায়ে রক্তের ধারা যে এখনো বন্ধ হয়নি।

চেয়ারঃ কোথায়? তুই, তুই এত কাছে এসেছিস কেন? দুরে সরে দাঁড়া। দুরে।

স্লোগানঃ তুমি কাছে ডাকলে বলে তো এলাম। তাছাড়া, আমি দুরে সরলে কি এই দাগ মুছে যাবে?

চেয়ারঃ মানুষের স্মৃতি বিস্মৃতির! ৭১ তুচ্ছ হলে ২৪ হতে কতক্ষণ? নয় মাসের যুদ্ধে না হলে এক মাসের যুদ্ধে কি হয়?

স্লোগানঃ তোমাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আদতে এই বাংলার?

চেয়ারঃ তোকেও অচেনা লাগে। ভিনদেশী ছলনায় চিৎকার তুলিস। যেখানে যাচ্ছিলি, যা। তোর সাথে কথা চালানো আর সম্ভব না!

স্লোগানঃ তুমি তো ভারী পেঁচুক! কোথা থেকে কি প্যাঁচিয়ে দিলে!

চেয়ারঃ তুই বড্ড বাচাল। আমাকে বাচাল বানাসনা। যা। দুর হ।

পা চালায় স্লোগান, যেদিকে যাচ্ছিল। ধীর পায়ে হেঁটে চলে। ক্লান্ত সে, কণ্ঠ খুঁজছে। দারাজ একটা কণ্ঠ পেলে সতেজ হবে। মাঝে মাঝে অবাক আনন্দে লাফ দেয়। বলে ওঠে, ‘দামামা বাজবে। আরেকটি যুদ্ধ হবে। কোথায় আমার সেই দরাজ কন্ঠ!’

নাপিত দোকানে আসেনা। কিন্তু ওই যে চারজন দোকানে ঢুকে পরল, ওরা কারা? ওদের আগে কখনো দেখেনি চেয়ার। ধরাধরি করে লাশ দুটো কাঁধে করে অন্ধকারে কোথাও আবার মিলিয়ে যায় ওরা।

কালো কুচকুচে অন্ধকার। নাপিতের দেখা নেই। ইন্টারনেটও নেই। তবু চেয়ারের ঘুম আসে না, বুকে বাজতে থাকে স্লোগানের পায়ের শব্দ। দৃম দৃম!

Comments

Popular posts from this blog

Smugglers-BDR Affair on Barendra Express

Jessore GOC, pilot killed in chopper crash

Will Altadighi come back to life?