কৃষকের আত্মহত্যা: অভিযুক্ত ‘পলাতক’, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ‘আশ্চর্যজনক’




রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে গত ২৩ মার্চ বিকেলে ২ সাঁওতাল কৃষকের বিষ পান করার ঘটনার পর থেকে তাদের একজনের পরিবার দাবি করে আসছিলেন যে স্থানীয় গভীর নলকূপের চালক সাখাওয়াত হোসেন তাদের জমিতে সেচের পানি দিতে অস্বীকার করেছিলেন।

সেই রাতে সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মার্ডির মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে বারবার জানিয়েছিলেন, সাখাওয়াতই তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন এবং বিষ পান করতে প্ররোচনা দিয়েছেন।

পুলিশ তখন ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যদের কারো কথায় কান দেয়নি। সেই সুযোগে সাখাওয়াত এলাকায় লোকজন জড়ো করে সাঁওতাল কৃষকদের ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। সাখাওয়াত হোসেন কৃষক লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি।

শুক্রবার রাতে অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী গোদাগাড়ি থানায় গিয়ে সাখাওয়াতকে অভিযুক্ত করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করার পর থেকে পুলিশ বলছে সাখাওয়াতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন।



রাজশাহীর এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন রোববার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছিলাম। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবে জেনে যায় ভিকটিমের স্ত্রী থানায় মামলা করেছেন। এটা জেনেই তিনি পালিয়ে যান।'

এবিএম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারের এসপি ছিলেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার পর রাজশাহীতে বদলি হয়ে আসেন।

আগে কেন সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কোনো মামলায় আসামি হওয়ার আগে কাউকে গ্রেপ্তার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হত না।'

শুক্রবার বিকেলে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবির বিষয়ে পুলিশকে কোন ব্যবস্থা না নিতে দেখে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী এসপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, 'আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। যখন আমি জানলাম পুলিশ ভূক্তভোগী পরিবারের দাবিগুলো বিশ্বাস করছে না, তখন আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

তিনি জানান, ঘটনার শিকার কৃষকদের গ্রামে পরিদর্শনকালে তিনি এমন সাক্ষীদের খুঁজে পেয়েছেন যারা বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে অভিনাথকে ২ সপ্তাহ ধরে তার ন্যায্য সেচের পানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

সাক্ষীরা তাকে জানিয়েছেন, সাখাওয়াত কীভাবে কৃষক অভিনাথকে বিষ পানে প্ররোচনা দেওয়ার পর তাকে ইশ্বরীপুরের ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, তাকে তার বাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে রেখে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এই সংসদ সদস্য জানান, অভিনাথ নিজেই তার মৃত্যুর আগে তার পরিবারের সদস্যদের বলেছেন যে তিনি সেচের পানি না পেয়ে বিষ পান করেন।

ফজলে হোসেন বাদশা দ্য ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, 'এটা আশ্চর্যজনক যে এত চাক্ষুষ প্রমাণ থাকতেও কেন পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে বিলম্ব করল।'

সংসদ সদস্যের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে এসপি মাসুদ বলেন, 'পুলিশ এখনো বিশ্বাস করতে চায় না যে শুধুমাত্র সেচের পানির অভাবে একজন কৃষক আত্মহত্যা করতে পারেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা অভিনাথের ধান ক্ষেতে পানি পেয়েছি, পানির অভাবে তার ধান নষ্ট হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।'

এসপি বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে যা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্পষ্ট হবে।

বুধবার বিকেলে ইশ্বরীপুর গ্রামে গভীর নলকূপের পাশে দাঁড়িয়ে বিষপান করেন অভিনাথ (৩৬) এবং তার চাচাতো ভাই নিমঘুটু গ্রামের রবি মার্ডি (২৭)। অভিনাথ সে রাতেই নিজ বাড়িতে মারা যান এবং শুক্রবার রাতে হাসপাতালে মারা যান রবি।

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম বাদী হয়ে গোদাগাড়ী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের কথা অস্বীকার করেন রোজিনা। তিনি বলেন তিনি যখন স্বামীর মৃত্যুতে শোকে কাতর ছিলেন তখন পুলিশ তার বাড়িতে বসে সাদা কাগজে তার সাক্ষর নিয়েছিল।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম সাদা কাগজে সাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তার বাড়িতে বসে মামলা লেখা হয়। সেখানে রোজিনার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল।'

রোজিনা শুক্রবার রাতে গোদাগাড়ী থানায় গিয়ে গভীর নলকূপ চালক সাখাওয়াতকে অভিযুক্ত করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন।

যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র ফৌজদারি আইনজীবী নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম বলেন, 'রোজিনার সাক্ষরে প্রথমে দায়ের করা অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা পরের আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাকে দুর্বল করে দিতে পারে।'

স্থানীয়রা বলেন, অভিনাথ ও রবির সেচের জলের খুব দরকার ছিল এবং ২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সাখাওয়াত তাদের উপেক্ষা করছেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, অভিনাথের মৃত্যুর পর সেই রাতেই ২ কৃষকের জমিসহ সংশ্লিস্ট গভীর নলকূপ থেকে অনেক জমিতে পানি দেওয়া হয়েছিল।

আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা দায়েরের পর সাখাওয়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে আত্মগোপনে যাওয়ার আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন সাখাওয়াত।

Comments

Popular posts from this blog

Smugglers-BDR Affair on Barendra Express

Jessore GOC, pilot killed in chopper crash