সাঁওতাল কৃষকের মৃত্যু ‘সেচের পানি পাই না’ তদন্ত কমিটিকে জানালেন স্থানীয় কৃষকেরাও



সেচের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়িতে ২ সাঁওতাল কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

আজ মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিদর্শনে গেলে কয়েকজন কৃষক তাদেরকে জানান, গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন ক্ষুদ্র কৃষকদের পানি দেন না। তিনি ঘুষ নিয়ে নিজের পছন্দের কৃষকদের পানি দেন।

এদিকে অভিযুক্ত সাখাওয়াতের স্বজনরা কমিটিকে বলেছেন, ওই দুই কৃষকের পানির কোনো সংকট ছিল না।

গত ২৭ মার্চ রাজশাহীতে বিষপানে দুই কৃষক- অভিনাথ মার্ডি (৩৬) ও রবি মার্ডির (২৭) আত্মহত্যার ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। অভিযোগ ওঠে, সেচের পানি না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জুবাইর হোসেন বাবলুর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন — রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, বিএডিসির (নাটোর) নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) সাজ্জাদ হোসেন এবং বিএমডিএর (নওগাঁ) নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলী।

কমিটিকে ২ কৃষকের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান ও সময়মতো সেচের পানি না দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইশ্বরিপুর ও নিমঘুটু গ্রামে গিয়ে প্রায় ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন।

অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম তদন্ত কমিটির সদস্যদের বলেন, 'সাখাওয়াত পানি না দেওয়ায় আমার স্বামী কীটনাশক পান করেছে বলে মৃত্যুর আগে আমাকে জানায়।'

'অভিনাথ গভীর নলকূপের পাশে সাখাওয়াতের সামনে দাঁড়িয়ে কীটনাশক পান করেছিলেন,' বলেন তিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওই ২ কৃষকের জমি পরিদর্শন করেছেন। সেসময় অভিযুক্ত সাখাওয়াতের চাচাতো ভাই শিহাব আলী তাদের জমিতে জন্মানো ঘাস দেখিয়ে তদন্ত কমিটিকে বলেন, 'তারা তাদের খেতের যত্ন নিতো না।'

সেখানে উপস্থিত অন্য এক কৃষক তদন্ত কমিটিকে জানান, পানির অভাবে জমি নিড়ানি দিতে না পারায় জমিতে ঘাস জন্মেছে। মারা যাওয়ার পর তাদের জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ভ্যানচালক বাপ্পী মার্ডি তদন্ত কমিটিকে জানান, কীটনাশক পানের পর সাখাওয়াত অভিনাথকে তার ভ্যানে করে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে যান।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইশ্বরিপুর ও নিমঘুটু গ্রামে গিয়ে প্রায় ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন। 

কৃষক মহেশ মুর্মুও তদন্ত কমিটির কাছে সময়মতো পানি না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। গভীর নলকূপের পাশেই আমার ফসলের খেত শুকিয়ে গেছে। অপারেটর আমাকে পানি দেন না। তিনি ঘুষ নিয়ে দূরের জমিতে পানি দেন।'

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. জুবাইর হোসেন বাবলু সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি এবং প্রতিবেদন দেওয়ার এখনো সময় আছে।

বিষপানে কৃষক- অভিনাথ মার্ডি (৩৬) ও রবি মার্ডির (২৭) আত্মহত্যার ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবির ভাই সুশীল মার্ডি বাদী হয়ে ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গোদাগাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন।


Comments

Popular posts from this blog

Smugglers-BDR Affair on Barendra Express

Jessore GOC, pilot killed in chopper crash